দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ২১
কিন্ত ১৪৪৪ সালের নভেম্বরে মুরাদ ভার্নাতে হঠাৎ করেই তাদের সামনে
রাস্তা বের করা প্রভৃতির মাধ্যমে সুলতান মুরাদ খ্রিস্টান বাহিনীকে মোকাবেলা
করার জন্য প্রণালি ধরে এগিয়ে যান। জানিসারিসরা প্রধান খ্রিস্টান আক্রমণকে
ঠেকিয়ে দেয়। লাডিসলাসকে যুদ্ধক্ষেত্রেই হত্যা করে বর্শার মাথায় তার
হেলমেটসহ মাথা ও অন্য বর্শায় চুক্তি ভঙ্গের কপি ঝুলিয়ে খ্রিস্টানদের দেখানো
হয়। কার্ডিনাল জুলিয়ান যিনি এই ক্রুসেডকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ।
পালিয়ে যান এবং তাকে আর কখনো দেখা যায়নি। হুনযাদীকে ওয়ালাসিয়ার নেতা
পূর্বশক্রতার জের ধরে বন্দি হিসেবে নিয়ে যায় নিজের সাথে । রাজা
মধুতে চুবিয়ে রাখা হয়। পরবর্তীতে নদীর জলে পরিষ্কার করে বর্শায় করে
প্রণালি ধরে প্রদর্শন করা হয়।
এই জয়ের ফলে দানিয়ুব পর্যন্ত সব অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসে । এরপর
১৪৪৪ সালের শেষ দিকে মাহমুদকে সিংহাসনে বসান আনুষ্ঠানিকভাবে ।
সুলতান হিসেবে মাহমুদ শাসনকাজ শুরু করে ।
কিন্তু ১৪৪৬ সালের বসন্তে মুরাদ পুনরায় আড্রিয়ানোপল ফিরে আসেন।
কেননা হালিলের সাথে মাহমুদের সম্পর্কের অবনতি হয়। এ সময় মাহমুদ
কনস্টান্টিনোপল আক্রমণে উদ্যত হন, যখন কিনা অটোমান সৈন্যরা গ্রিক এবং
আলবেনিয়া সীমান্তে ব্যস্ত। এ সময় আবারো হালিলের সাথে মাহমুদের
মতবিরোধ হয়| হালিল শান্তিকামী মানুষ । তার পক্ষে ছিলেন জানিসারিস এবং
মুরাদ। এবার মাহমুদ অবসর গ্রহণ করে ম্যাগনেসিয়ায় ফিরে যান। পিতা
মুরাদ পুনরায় সিংহাসনে বসেন, মৃত্যু পর্যন্ত
যুদ্ধ পুনরায় মুরাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বাইজেন্টাইনের রাজা
মোরিয়াতে দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে । ফলে মুরাদ বাধ্য হন গ্রিস অভিমুখে অভিযান শুরু
করতে । এখানে সফলভাবে যুদ্ধে জয় লাভ করে গ্রিক স্বেচ্ছাচারী রাজাকে
প্রজায় পরিণত করেন তিনি। একই সাথে ল্যাটিন প্রজাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ
আনেন।
আলবেনিয়াতে যুদ্ধ শুরু হয়। এখানে হুনযাদীর ন্যায় জর্জ ক্রান্তিয়োটার
উান ঘটে। জর্জ সুলতানের কোর্টে বেড়ে ওঠে এবং শিক্ষা লাভ করে।
মুসলিম ধর্মান্তরিত হয়ে ইস্কান্দার বেগ নামগ্রহণ করে অটোমান সেনাবাহিনীর
কাজ করে। দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে অটোমান বাহিনী ছেড়ে নিজের
দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ শুরু করে। কাকতালীয়ভাবে হুনযাদীর সাথে
উদ্দেশ্যে মিলে যাওয়ায় দুই নেতা একত্রে ১৪৪৮ সালে সার্বীয়া ও বসনিয়ার
সহায়তায় হাঙ্গেরির সীমান্ত রক্ষায় তুর্কি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
এতিহাসিক কসোভোর ময়দানে মুরাদ দ্রুত এ বাহিনীকে পরাজিত করেন।
এর মাধ্যমে সাবীয়ার স্বাধীনতার যবনিকাপাত ঘটে ।
এরই মাঝে মাহমুদ ম্যাগনেসিয়ায় গুলবাহার নায়ী এক রমণীর সাথে
গুড়িয়ে পুত্রসন্তানের জনক হন। যে শিশু পরবর্তীতে দ্বিতীয় বায়েজীদ নামে
শাসন ক্ষমতা লাভ করে। সুলতান মুরাদ রাজবংশীয় বধূ হিসেবে গুলবাহারকে
মেনে না দিয়ে প্রভাবশালী তুর্কমান রাজকুমারের কন্যার সাথে মাহমুদের বিয়ে
দিলেও মাহমুদ তাকে সবসময় অবজ্ঞাই করেছেন। এমনকি কনস্টান্টিনোপলে
ম[হমুদ কোর্ট প্রতিষ্ঠার পরেও তিনি আদ্রিয়ানোপলের হারেমেই দিন কাটিয়েছেন।
শেষ বছরগুলোতে মুরাদ পুত্রের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। কসোভোর
যুদ্ধে অগ্রিমন্ত্রে দীক্ষিত হন মাহমুদ । পিতার সাথে ১৪৫০ সালের অসফল
আলবেনিয়ার যুদ্ধেও সঙ্গী হন। এর পরের বছর মুরাদের মৃত্যুর সময় মাহমুদ
লেন ম্যাগনেসিয়ায়। পিতার মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরপরই নিজের আরবীয়
খোড়ার পিঠে চড়ে উত্তরে যাত্রা শুরু করেন, প্রধান উক্তি ছিল, “আমাকে যে
এ।লোবাসো, আমাকে অনুসরণ করো ।”
গালিপল্লীতে দুই দিন অপেক্ষা করে নিজ বাহিনী সহযোগে আড্রিয়ানোপল
,শছান। হালিল এবং পিতার কাছের বন্ধু দ্বিতীয় উজির ইশাক পাশাকে
দেখতে পান। তাদেরকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে হালিলকে পূর্ব পদে এবং
£শ।ককে আনতোলিয়ার গভর্নর পদে নিয়োগ দান করে পিতার মৃতদেহকে
ন।সতে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
,এণশবেলা করেন। কঠোর হাতে এ বিদ্রোহ দমন করেন তিনি। এছাড়া আরো
নত নতুন ইউনিট তৈরি করে জানিসারিসদেরকে নতুনভাবে ঢেলে সাজান।
॥নে এ বাহিনী সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। এরপর শীঘ্বই
শর্ঠঙ হয়ে উঠেন নিজের গন্তব্যের লক্ষ্যে__কনস্টান্টিনোপল অবরোধে ।
খ্রিস্টান শক্তিসমূহ প্রথম দিকে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদকে তেমন একটা আমল
দেয়নি। বখে যাওয়া রাজকুমারের পূর্ব ইতিহাস দেখে কেউ ধারণা করেনি যে,
তিনি একদিন পিতার মতোই দক্ষ হয়ে উঠবেন। ছোটখাটো কিন্তু শক্তিশালী ও
সুদর্শন মাহমুদ ছিলেন ঠাণ্ডা স্বভাবের । নিজের উপস্থিতি দিয়ে চারপাশের শ্রদ্ধা
আদায় করে নেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব ছিল তার।
গিবন লিখে গেছেন, “তীর ঠোটে ছিল শান্তির বাণী। কিন্তু হৃদয়ে ছিল
যুদ্ধের বাসনা ।” বিদেশি দূতদের সাদরে গ্রহণ করে তিনি পিতার সই করা
চুক্তিসমূহ পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেন। সম্রাট কনস্টান্টাইনের রাষ্ট্রদূতকে
বন্ধুসুলভ আতিথেয়তা প্রদান করেন।
আবার এশিয়া মাইনরে অনেক রাষ্ট্রীদূতই সুলতানের কাছে যথোপযুক্ত
সম্মান না পাওয়ার অভিযোগ করেন। প্রধান উজির হালিল এদেরকে
সাবধান করে লিখেন, তোমরা যদি অর্খানের (বায়েজীদের পৌত্র) সাথে
বাহিনী গঠন করে অগ্রসর হও; নিশ্চিত থাকো যে নিজেদের ধ্বংসকে
তরান্বিত করবে।
আদড্রিয়ানোপলে ফিরে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ স্টুমা শহর থেকে
গ্রিকদেরকে বিড়াতন ও তাদের রাজস্ব বায়েজাপ্তকরণের নির্দেশ দেন। এশিয়া
মাইনরে ফিরে এসেই বাইজেন্টাইন অঞ্চলে প্রাসাদ তৈরির আদেশ দেন। এর
ফলে প্রণালি পথকে নজরে রাখা এবং কনস্টান্টিনোপলকে অবরোধ করা
সহজতর হবে।
কিন্তু বাইজেন্টাইন সম্রাট তৎক্ষণাৎ এ সিদ্ধান্তকে চুক্তির বরখেলাপ ভেবে
রাষ্ট্রদূত পাঠান মাহমুদের কাছে। সুলতান রাষ্ট্রদূতকে অস্বীকার করেন।
প্রাসাদের নির্মাণকাজ শুরু করার পর সম্রাট দ্বিতীয় আরেকজন রাষ্ট্রদূত পাঠান
নানা উপটৌকনসহকারে এবং বসফরাসে গ্রিক গ্রামগ্ডুলোর সুরক্ষার অনুরোধ
জানিয়ে । সুলতান আবারো তাদের ফিরিয়ে দেন। সবশেষে শেষ রাষ্ট্রদূত এসে
কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করা হবে না মর্মে নিশ্চয়তা চাইতেই সুলতান তাদের
হত্যা করেন। এর ফলেই সবার মাঝেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সুলতান নিজে পরিকল্পনা করে প্রাসাদের দেয়াল তৈরি করেছেন। মাত্র
সাড়ে চার মাসের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বোগাজ কেসেন নামে
নামকরণ করা হয়।
প্রাসাদের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সুলতান সেনাবাহিনী নিয়ে
কনস্টান্টিনোপলের দেয়াল পরিদর্শন করেন তিন দিন ধরে। এরপর শীতে
আড্রিয়ানোপলে নিজের কোর্টে ফিরে এর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করেন।
রাতারাতি তিনটি কামান স্থাপন করেন প্রণালির পাশের একটি উঁচু টাওয়ারে ।