কুরুলুস উসমান ভলিউম ৮৩ বাংলা সাবটাইটেল – অনুবাদ মিডিয়া

দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১৩

কিন্তু তারপরই দুর্ভাগ্য তাদের থামিয়ে দেয়। প্রথমত বলা যায় পেছন
দিকের খিড়কীর দরজার কথা । দেয়ালের উত্তর দিকের এই দরজা দিয়ে এক
দল তুর্কি সেনা প্রবেশ করে টাওয়ারে চড়ে বসে । গ্রিকরা হয়তো এটাকে
থামাতে পারত যদি না দ্বিতীয় দুর্ভাগ্য তাদের না থামিয়ে দিত। তাদের
সেনাপ্রধান জিউসটিয়ানীর বুকের বর্ম ভেদ করে খুব কাছ থেকে ছোড়া গুলি
ঢকে গেলে তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হন।

প্রচণ্ড যন্ত্রণায় সাহস হারিয়ে
পার্থনা করেন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে যাওয়ার। কিন্ত্র এ কথায় কান না দিয়ে সন্ত্রাট
অনুরোধ করেন তাকে ছেড়ে না যেতে। ভেতরের দরজা খুলে জিউসটিয়ানীকে
গোন্ডেন হর্নে অবস্থিত জেনোইস জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়। এ অবস্থায় তার
জেনোইস সৈন্যরা যুদ্ধে পরাজয় ঘটেছে ভেবে সেনাপতির সাথে চলে যায়।

এর ফলে সৈন্যদের মনোভাব ভেঙে যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । খুব দ্রুত
এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে সুলতান চিৎকার করে উঠেন, “শহর আমাদের” এবং
আানিসারিসদের সর্বশেষ আক্রমণের নির্দেশ দেন। আনাতোলিয়ার দৈত্যাকৃতি
সৈন্য হাসান নেতৃতৃ দিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও জানিসারিসরা শীঘ্বই গ্রিকদের
এচুকাটা করে ফেলে। এরপর অনেক জানিসারিস কোনো বাধা ছাড়াই
ভেতরের দেয়ালের ওপর চড়ে বসে। একই খিড়কীর দরজাতেও তুর্কি পতাকা

এরই মাঝে সম্রাট খিড়কীর দরজার কাছে যেতে চাইলেও গুজবে শুনতে
পান তুর্কিরা পৌছে গেছে; কিছুমাত্র জেনোইস আছে প্রতিহত করার জন্য।
সম্রাট ঘুরে প্রধান দরজার কাছে যেতে চাইলে দেখতে পান, ইতিমধ্যেই তা
তুর্কিদের দখলে চলে গেছে। শহর কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং আমি এখনো
বেঁচে আছি, ভেবে সম্রাট ঘোড়া থেকে নেমে রাজকীয় চিহ্ খুলে ফেলে ছুটে
আসা জানিসারিসদের মাথা লক্ষ করে দৌড় দেন। এরপর জীবিত অথবা মৃত
আর কখনোই দেখা যায়নি তাকে ।
হয়ে পড়ে। শহরজুড়ে নরহত্যা শুরু করে। গির্জা, আশ্রম, প্রাসাদ বাড়িঘর
সবকিছু তছনছ করে ফেলতে শুরু করে৷ গ্রিকরা হাজারে হাজারে দৌড়ে যায়
তাদের প্রধান গির্জার দিকে।

ইতিহাসবিদ মাইকেল দুকাস এ সম্পর্কে লিখে গেছেন, বিশাল গির্জা চত্রে
প্রবেশ করেই গ্রিকরা প্রধান দরজা বন্ধ করে দেয়। অপেক্ষা করতে থাকে কোনো
স্বর্গদূত এসে তাদের রক্ষা করবে। দিনের প্রথম ঘণ্টাও পার হয়নি। শহর লণ্ভগু
করে তুর্কিরা এসে গির্জায় দরজার কুঠারাঘাত করতে থাকে।

সুলতান বিজয়ীর বেশে শহরে প্রবেশ করে দিনের শেষ ভাগে।
সোজা থামেন প্রধান গির্জার সামনে। ঘোড়া থেকে নেমে এক মুঠো মাটি নিয়ে
নিজের মাথায় মাখান। গির্জায় প্রবেশ করে বেদীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়
দেখতে পান একজন সৈন্য মেঝে থেকে মার্বেল পাথর খুলে নিচ্ছে। সুলতান
তৎক্ষণাৎ সৈন্যটিকে তরবারির আঘাত করে জানিয়ে দেন যে সম্পদ এবং বন্দি
সৈন্যদের । কিন্তু দালান-কোঠা সুলতানের । সৈন্যটি পায়ের ওপর পড়ে গিয়ে
চলে যায়।

মাহমুদ নির্দেশ দেন এ গির্জী মসজিদে রূপান্তর হবে। তৎক্ষণাৎ মুসলিম
ধর্ম নেতা উঠে আজান দেয়। এরপর সুলতান নিজে বেদিতে ওঠে আল্লাহকে
অভিবাদন জানান এ বিজয়ের জন্য। তারপর যখন তিনি রাস্তায় বেরিয়ে
আসেন সব কিছু নিশ্ুপ হয়ে যায়। সুলতান নির্দেশ দেন একদিনের লুষ্ঠনই
যথেষ্ট হয়েছে সৈনদের জন্য।

বিনাশের কথা ভেবে হতচকিত হয়ে ওঠে । শেষ মুহূর্তে ভেনেশীয়ান জাহাজ
বহরের মাধ্যমে পোপের সৈন্যবাহিনী শহর রক্ষার চেষ্টা করলেও আজিয়ানের
তীর থেকে আর এগোতে পারেনি । এই বিপর্যয় পশ্চিমা সভ্যতাকে হুমকির

মাঝে ফেলে । আবেগের দিক থেকে দেখতে গেলে ব্যাপারটা মানসিক । কিন্ত
কার্যত শতাব্দী পূর্বেই কনস্টান্টিনোপল পরাজিত হয়েছে। নিজেদের সমস্যা
নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পশ্চিমা বিশ্ব এটা আন্দাজ করতে পারেনি যে আধুনিক
একটি সেনাবাহিনীর কাছে মধ্যযুগীয় একটি দেয়াল কতটা অসহায়।

১৪৫৩ সালের ২৯শে মে তারিখটি ইতিহাসে মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের
মাঝের সন্ধিক্ষণ হিসেবে পরিচিত। সত্যিকারভাবে বলতে গেলে কনস্টান্টিনোপলের
পতন বিভিন্ন ক্রমাগত প্রক্রিয়ার মাঝের একটি উপাদান হিসেবে কাজ করেছে।

সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ নিজের রাজ্যভিষেকের সময় থেকেই নিজেকে রোমান
সাম্রাজ্য ও এর খ্রিস্টান বিজয়ীদের উত্তরসূরি হিসেবে দেখে আসছে। কনস্টান্টিনোপলের
বিজয় এ ধারণাকেই আরো পাকাপোক্ত করে। নিজের শিক্ষা এবং সরকার
চেতনা ছিল সুদুরপ্রসারী। নিজের ক্ষমতার ওপর আত্মবিশ্বাস থাকাতে মহাবীর
আলেকজান্ডার ও সিজারের খ্যাতিকেও ছাড়িয়ে যেতে চান।

নিজের অটোমান এতিহ্যকে মাথায় রেখে দ্বিতীয় মাহমুদ পৃথিবীব্যাপী
ইসলামিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চান। পশ্চিমকে আমন্ত্রণ জানান দুটি ভূমি
এবং দুটি সমুদ্রকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব হিসেবে ঘোষণা করতে ।
রুমালিয়া ও আনাতোলিয়া ভূমধ্যসাগর এবং কৃষ্তসাগর কনস্টান্টিনোপল
বিজয়ের মাধ্যমে পূর্বতন খলিফারা যা করতে পারনেনি, মাহমুদ তাই করে
দেখান ।

মাহমুদ নিজেই নিজের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন বাইজেন্টাইন
সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করা নয়, বরঞ্চ অটোমান রীতির মাধ্যমে একে নতুন জীবন
দান করা । রাজধানীর নতুন নাম হয় ইস্তাম্বল।

মাহমুদের চিস্তানুযায়ী এটি হবে এমন এক সাম্রাজ্য যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা
এবং ইসলামের নামে ধর্ম উভয়ই থাকবে । কিন্ত একইভাবে একে একটি বিশ্ব
সাম্ত্রা্যও হতে হবে। যেখানে সকল জাতিবর্ণের মানুষ একত্রে সুখে শান্তিতে

ভাবে বসবাস করবে । বাইজেন্টাইন সম্রাটের পরাজয়ের সাথে সাথে
গির্জা এবং রাষ্ট্র একই প্রশাসনের ছায়াতলে চলে আসে । খ্রিস্টান গির্জী এখন
মুসলিম রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায় এবং কর দেয়ার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এর
বিনিময়ে এর সম্প্রদায় পূর্বের মতো উপাসনার পূর্ণ স্বাধীনতা এবং নিজস্ব
জীবনযাত্রার ধরন বজায় রাখার স্বাধীনতা পায়।

পরাজিত জাতি হিসেবে প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্ধাদা বা রাজনৈতিক
স্বাধীনতা তাদের না থাকলেও শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে সবার অংশগ্রহণ ছিল সমান। এ
পাশাপাশি অর্থডকু, আর্মেনীয়ান এবং জিউ প্রধান রাবিব থাকতে হবে।