
নিস্তব্ধতা, আমি কিন্তু বেকারবিল্ডিংটা রাস্তার একদম কাছঘেঁষে। রুমে বসেই গাড়ি, ঘোড়া, ট্রাক সবকিছুর শা শা শব্দ কানে বাজে। বাড়িওয়ালা যে কি ভেবে এখানে বিল্ডিংটা বানিয়েছেন, তা ভেবে পায় না কর্ণভ। বহু আগের পিচঢালা রাস্তা জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে আছে। হর্ণের তীব্র শব্দে বেশিদিন কেউ ভাড়া থাকতে চায় না। কর্ণভ নতুন এসেছে। গত সপ্তাহে তিনতলার ফ্ল্যাট-টাতে উঠেছে। এখন মনে হচ্ছে, বিশাল বড় ভুল করে ফেলেছে এখানে উঠে। বেকারত্ব ঘোচাতে গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল। অনবরত গাড়ির হর্ণের শব্দে রাতে ঘুমানো হয়না। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। বিধস্ত সে ইন্টারভিউর হলে ঘুমু ঘুমু চোখে তাকিয়ে থাকে। ঢুলু ঢুলু করে দেহ। প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলে। বুদ্ধি করে কাল কানে তুলো দিয়ে ঘুমিয়েছিল সে। ঘুম মোটামোটি ভালোই হয়েছে। বোধকরি ইন্টারভিউটাও ক্ষীণ ভালোর কাতারেই পরে।বাথরুমের দরজাটা খট করে খুলে বেরিয়ে এলো কর্ণভ। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ তার। পুরু ঠোঁট, ধারালো-তীক্ষ্ণ চোখ, চোখা নাক। ভ্রুযুগল ঘন। নিঃসন্দেহে একজন সুদর্শন পুরুষ। পেটানো শরীর। সুঠাম দেহের অধিকারী। একহাতে চুল ঝারতে ঝারতে মেঝেতে গামছা ছুঁড়ে মারলো সে। স্যুটকেস খুলে ধূসর রঙের টি-শার্ট বের করলো। লোমশ বুকটা ঢেকে গেল কাপড়ের আড়ালে।দুইরুমের ফ্ল্যাট। বিল্ডিংয়ের বাহ্যিক দিকটা প্রথম দেখায় সবাইকেই পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেবে। ওইযে? পুরান ঢাকার বিল্ডিংগুলো আছে না? অনেকটা ওরকম দেখতে। তবে রুমগুলোয় আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। টাইলস করা, ফিটফাট। নতুন আসায় রুম দু’টোয় আসবাবপত্র নেই বললেই চলে। একটা তোশক, দুটো বালিশ আর একটা কোলবালিশ। রান্নাবান্নার কিছু নেই। হোটেলে গিয়ে খেতে হয়। কথা ছিল, চাকরি পেলেই ছোটন আর মাকে নিয়ে আসবে শহরে। কিন্তু আফসোস! এই দুর্ভাগার কপালে তো চাকরিই লেখা নেই। হাতের পাঁচ আঙুলে যা টাকা ছিল তাও ফুরিয়ে যাবে যাবে বলে রেড সিগনাল দিচ্ছে। এমতাবস্থায় নতুন বাসা খোঁজা দুঃসাহস বৈ সাহসের কাজ নয়।তপ্ত নিশ্বাসে ঘর ভরে গেল যেন। অক্সিজেন ফুরিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইডের উৎপত্তি ঘটলো। হাঁসফাঁস করলো বক্ষস্থল। অশান্ত হলো। বালিশের নিচ হতে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করলো কর্ণভ। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে দরজায় তালা লাগালো। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে একবার ট্রাউজারের পকেট হাতড়ে দেখলো। লাইটারটা সাথে এনেছে তো? হ্যাঁ, এনেছে।সময়টা দুপুরের শেষভাগ। এ সময় স্বাধারণত ছাদে কেউ আসে না। বিস্তর গাছগাছালির একপাশে একটা ছোট্ট সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ আছে। কর্ণভ ওখানটায় বসে মহানন্দে সিগারেটের একেকটা সুখটান দেয়। দৃষ্টি সীমান্তহীন আকাশের পানে রেখে অনেক্ষণ চুপচাপই বসে রয়। কি যেন ভাবে। চিন্তা করে।

কিন্তু আজ আর চিন্তা করার পরিস্থিতি নেই। তার বসার জায়গায় একজন অপরিচিত মেয়ে আগে থেকেই নিজের আধিপত্য স্থাপন করে রেখেছে। মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। উলটো পিঠ করে বসে আছে। লালচে কেশে ভরপুর মাথা। লম্বায় হাঁটু অব্দি হবে হয়তো। সিমেন্ট ছুঁয়ে দিচ্ছে। শরীর হালকা হালকা কেঁপে উঠছে। মেয়েটা কি কাঁদছে? কর্ণভ ভ্রু বাঁকালো। কপালে বিদ্যমান হলো একরাশ বলিরেখার ভাঁজ। ধীর পায়ে মেয়েটার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো সে। গলা ঝেড়ে কেঁশে নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার ক্ষীণ প্রয়াস করলো। মেয়েটা পেছন ফিরে তাকালো না। কি ভীষণ ভাবান্তরহীন। কর্ণভ এবার আওয়াজ করে ডাকলো,—“এই মেয়ে, কে তুমি? কাঁদছ কেন?”চট করে মাথা তুলে তাকালো মেয়েটা। পিছু ফিরলো। কর্ণভ স্তব্ধ হলো। স্নিগ্ধ, ক্রন্দনরত মুখটায় হাজারো মায়া খুঁজে পেল হঠাৎ করেই। কণ্ঠনালিতে শব্দজোট হলো। মুখশ্রীতে অপ্রস্তুত ভাব। নিজেকে সামলালো সে। শক্ত চোখে মেয়েটার অশ্রুসিক্ত নেত্রে নেত্র মেলালো। আবারও জিজ্ঞেস করলো,—“কে তুমি? কাঁদছ কেন?”বার কয়েক পলক ঝাপটালো মেয়েটা। বিস্মিত চোখে কর্ণভের আগা-গোড়া দেখলো। জবাব দিলো না। কর্ণভ বিরক্ত হলো এতে। রুষ্ট কণ্ঠে বলে ফেললো,—“কি বলেছি তোমাকে? বোবা নাকি? কথা বলতে পারো না?”মেয়েটার কোমল হৃদয়ে কথাটা প্রবল আঘাত আনলো যেন। গাল বেয়ে আবারও কয়েক ফোঁটা জল গড়ালো। কর্ণভের পুরোদমে মেজাজ বিগড়ে গেল এবার। আশ্চর্য! মেয়েটা কথা বলছে না কেন? সমস্যা কি? মুখ থেকে বিরক্তসূচক আওয়াজ বের করে অন্যদিকে তাকালো কর্ণভ। মেয়েদের কান্না সহ্য করতে পারে না সে। মায়ের কথা মনে পরে। ঝাঁঝালো কণ্ঠে সে ধমকের রেশ ধরে বললো, “কান্না বন্ধ করো।”কান্না বন্ধ হলো না। সে আরও কয়েকদফা সিক্ত গালটাকে বিরতিহীন পানির ধারায় ভিঁজিয়ে নিলো। ঠোঁট উলটে কর্ণভের দিকে চেয়ে রইলো ক্ষণকাল। হাত উঁচালো। হাত দিয়ে নানা ভঙ্গি করে কি যেন বলতে চাইলো বারবার। কোটর থেকে চোখদুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো কর্ণভ। বিশ্বাস হলো না। সন্দিহান কণ্ঠকে উঁচু করে প্রশ্ন ছুঁড়লো,—“তুমি কি সত্যি বোবা?”মেয়েটা মাথা নিচু করে মাথা দোলালো। একবার, দুবার, তিনবার, বহুবার। কর্ণভের অভ্যন্তরে খারাপ লাগার সৃষ্টি হলো। মনে হলো, এভাবে সরাসরি ‘বোবা’ শব্দটা উচ্চারণ করা ঠিক হয়নি। মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে হয়তো। ভুল সুধরানোর উছিলায় কর্ণভ কোমলস্বরে আবার বললো,—“কেঁদো না। চুল বাঁধো। দুপুর বেলা জ্বীনভূতদের চলাফেরার সময়। তোমার চুলগুলো সুন্দর। ওদের কিন্তু সুন্দর জিনিসের প্রতি লোভ বেশি। নজরে এলে কিছু করলেও করতে পারে।”মেয়েটা চমকালো খুব। জ্বীনদের প্রতি যে সে ভিষণ ভীতু, তা বোঝা গেল। ভড়কে উঠে দ্রুত দুহাতের সাহায্যে লম্বা চুলগুলো হাত খোপা করতে লাগলো। কর্ণভ পুরোটা সময় সূক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করলো মেয়েটাকে। ঘুরেফিরে চেহারার মাঝেই সীমাবদ্ধ রইলো প্রখর দৃষ্টির তীব্রতা। মেয়েটার কপালে কাঁটা দাগ। তাজা রক্ত বেরচ্ছে। এজন্যই কি কাঁদছে সে? কানের সঙ্গে একটা যন্ত্রও লাগানো আছে। কানে শোনার যন্ত্র। বাক্ প্রতিবন্ধীরা একসাথে কথা বলতে পারে না আবার শুনতেও পায় না। এধরণের ছেলেমেয়েদের সাধারণত কেউ কেউ এসব যন্ত্র-তন্ত্র দেয় না। সে হিসেবে মেয়েটা যে পরিবারের আদুরে একজন, তা সহজ ভাবেই বোঝা যাচ্ছে। কানের যন্ত্রেও দামি দামি ভাব সুস্পষ্ট।মেয়েটা হাত নামালো। কান্নারত মুখটার পরিবর্তন ঘটলো দু’তিন সেকেন্ডের মাঝেই। কর্ণভের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ হাসলো। হাত দিয়ে কি কি সব ইশারা করে বলতে লাগলো যেন। কর্ণভ বুঝলো না একফোঁটাও। ভ্রু দু’টো উঁচিয়ে ইশারাকৃত ভাষা বোঝার আপ্রাণ চেষ্টা করলো। সেসময়ই সিঁড়ির ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠের ডাক শোনা গেল,—“হাবিবা, হাবিবা? নিচে আয়। ছাদে কি করিস?”সিঁড়ির দিকে একবার তাকিয়ে কর্ণভের দিকে তাকালো হাবিবা। ঠোঁটের কোণে বিস্তর হাসি ফুটিয়ে মাথা দোলালো। একছুটে পালিয়ে গেল ছাদ থেকে। কর্ণভ মেয়েটার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো। আনমনে বিড়বিড়ালো, “মেয়েটা নাম তবে হাবিবা!”-হাবিবার সাথে কর্ণভের দেখা হলো এর দু’তিনদিন পর। দুপুর বেলা, ছাদে। কর্ণভ বেঞ্চে বসে সিগারেট ফুঁকছিল। হাবিবা কোত্থেকে এসে তার পাশে দাঁড়ালো। সিগারেটের বিশ্রী গন্ধে চোখ, নাক কুঁচকে ফেললো বিকৃত ভাবে। কণ্ঠনালি বেয়ে অস্পষ্ট শব্দ বেরুলো, “উহুহ্!”যেন সিগারেটের গন্ধ খুব অপছন্দ তার। কর্ণভ হাসলো। শেষ টান-টা দিয়ে সিগারেট ফেলে দিলো সুদূরে। হাবিবার দিকে মনোযোগী হলো। শুধালো,—“কেমন আছো হাবিবা?”প্রতিউত্তরে দাঁত বের করে হাসলো হাবিবা। হাত দিয়ে কি যেন ইশারা করলো। কর্ণভ ভ্রু কুঁচকে আন্দাজে প্রশ্ন করলো, “আমি কেমন আছি?”হাবিবা মাথা নাড়ালো। অর্থ্যাৎ হ্যাঁ। সে এটাই জিজ্ঞেস করেছে। কর্ণভ উত্তর দিলো,—“ভালো আছি। তুমি এসময় এখানে?”হাবিবা ইশারা করতে গিয়েও থেমে গেল। স্কার্টের পকেট থেকে একটা নোটপ্যাড আর লাল রঙের মার্কার বের করলো। সাদা কাগজে লাল কালির খসখসে দাগ কেটে কি যেন লিখলো। পরক্ষণেই নোটপ্যাডটা এগিয়ে দিলো কর্ণভের দিকে। কর্ণভ নিলো। টানা টানা হাতের লিখা নজরে এলো, “এমনি এসেছি। আপনি কি সবসময় এভাবে সিগারেট খান? সিগারেট খাওয়া ভালো না, জানেন না? ক্যান্সার হয়। মানুষ মারা যায়। কণ্ঠনালি কেমন বিশ্রী রকমের কালো কালো হয়ে যায়। টিভিতে দেখেছি আমি। আপনিও যদি ওদের মতো মারা যান? তখন আপনার পরিবার কষ্ট পাবে না? আর খাবেন না এগুলো। ঠিকাছে?”পড়তে পড়তে কর্ণভ মাথা ঝুকিয়ে হেসে ফেললো। হাসতেই রইলো। সশব্দে, একাধারে, খুবক্ষণ নিয়ে। চোখে পানি চলে এলো। হাসতে হাসতে বললো, “আচ্ছা, খাবো না।”হাবিবা মুগ্ধ হয়ে দেখে সেই হাসি। পুলকিত হয়। লোকটার হাসি খুব সুন্দর। খুব!সময় গড়ায়। মাস তিনেক পেরিয়ে গেছে। অপরাহ্নে সিগারেট ফুঁকার বাধ্যগত সময়টা এখন হাবিবা দখলে। মেয়েটা লাজুক প্রকৃতির। চঞ্চলও খুব। ইশারায় একবার কথা বলতে শুরু করলে বলতেই থাকে। কর্ণভ ইদানিং ইউটিউব থেকে বাক্ প্রতিবন্ধীদের ভাষা শিখার চেষ্টা করছে। শিখেছেও অল্প সল্প। হাবিবা যখন হাত দিয়ে নানা ভঙ্গিমা করে, কর্ণভ দৃঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। গাঢ়, গভীর দৃষ্টি। মেয়েটার সঙ্গ আজকাল তার প্রিয়র তালিকায় চলে এসেছে। কর্ণভ বুঝে, হাবিবার প্রতি সে ঝুঁকে যাচ্ছে। একজন বাক্ প্রতিবন্ধীর প্রতি! তারওপর বাড়িওয়ালার মেয়ে সে। কর্ণভ স্বাধারণ ভাড়াটে। বেকার।তপ্ত নিশ্বাস ফেললো কর্ণভ। হাবিবাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,—“নতুন বাসা খুঁজে পেয়েছি হাবিবা। এ বাসাটা ছেড়ে দিবো কয়েকদিন পর।”হাবিবা মলিন মুখে তাকায়৷ ইশারা করে, “কেন?”—“চাকরি হচ্ছে না দেখে মা ভাবছেন আমি বাজে কিছুতে জড়িয়ে গেছি। চিন্তায় চিন্তায় প্রেসার লো বানিয়ে ফেলেছেন। কাল বাদে গ্রাম থেকে শহরে আসবেন। মা হার্ডের রোগী। বেশি শব্দ সহ্য করতে পারেন না। তাই অন্য বাসায় উঠতে হচ্ছে।”হাবিবার চোখ বেয়ে জল গড়ালো। মেয়েটা এত নাজুক কেন? একটুতেই কেঁদে ভাসিয়ে ফেলে। চট করে কর্ণভের বলিষ্ঠ একহাত নিজের কোমল, নরম দুহাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো। শক্ত করে ধরলো। বারবার না না করে বলতে চাইলো, “যাবেন না। আমাকে ছেড়ে যাবেন না।”কর্ণভ ম্লান হাসলো। হাত বারিয়ে গালের পানিগুলো সযত্নে মুছে দিলো। আলতো করে বললো, “কাঁদে না। আমি আসবো তো তোমার সঙ্গে দেখা করতে।”—“হাবিবা।”হঠাৎ কে যেন ডেকে ওঠে। কর্ণভ, হাবিবা দু’জনেই ছাদের সদর দরজার দিকে তাকায়। মোশারফ করিম দাঁড়িয়ে আছেন। হাবিবার বাবা। আজকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মোসারফ করিমের মতোই রসিক মানুষটা। তবে রাগীও বটে। সামান্য থেকে সামান্য কারণেও রেগে যাওয়া তার মূখ্য গুন।কর্ণভ হাবিবা থেকে ক্ষীণ সরে দাঁড়ালো। হাবিবা তখনোও হাত ধরে ছিল। মোসারফ করিম বাজখাঁই গলায় ধমক দিতেই ছেড়ে দিলো। মোসারফ করিম আবার বললেন,—“তোমাকে আমি এজন্য এত ছাড় দিয়ে রেখেছি? বাসায় যাও! ছাদে কি?”হাবিবা অশ্রুসিক্ত নয়নে একবার কর্ণভকে দেখলো। দৌড়ে চলে গেল ছাদ হতে। মোসারফ করিম কর্ণভের দিকে এগিয়ে এলেন। অত্যাধিক গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন,—“আমার মেয়ে কথা বলতে পারে না, সেটা নিশ্চই জানো? ওর প্রতিবন্ধীতার সুযোগ নিচ্ছো নাকি?”কর্ণভের ভরাট কণ্ঠ, “ওকে প্রতিবন্ধী ভাবলে হয়তো সুযোগ নিতাম।”—“আমার মেয়েকে ভালোবাসো?”দৃঢ় ভাবে উত্তর দিতে হিমশিম খেলো কর্ণভ। সময় নিয়ে বললো,—“হ্যাঁ।”—“দুদিনের মোহ। সময়ের সাথে কেটে যাবে। যতদিন এখানে আছো, আমার মেয়ের আশেপাশেও যাতে তোমাকে না দেখি।”তার একরোখা উত্তর, “সম্ভব না।”—“সাহস তো কম না তোমার। প্রতিবন্ধী দেখে মায়া করছো আমি বুঝি না ভেবেছ? টাকার জন্যই তো? কত টাকা প্রয়োজন তোমার?”—“আপনিই ওকে বারবার প্রতিবন্ধী বলে দূর্বল করছেন আঙ্কেল। তাছাড়া আমার এতও খারাপ দিন আসেনি একটা মেয়েকে টাকার জন্য ভালোবাসবো।”তিনি একটু চুপ থেকে শান্ত গলায় বললেন, “আমার মেয়েও কি তোমাকে ভালোবাসে?”—“ওকেই জিজ্ঞেস করুন।”মোসারফ করিম আবার একটু চুপ রইলেন। ধীর কণ্ঠে বললেন,—“চাকরি পেয়ে একবার আমার সাথে দেখা করবে।”কর্ণভ প্রচন্ড অবাক হলো। কথার অর্থ বুঝতে অনেক্ষণ লাগলো। সব এত সহজে হচ্ছে কিভাবে? বাস্তবতা তো এমন নয়। সে কি স্বপ্ন দেখছে? অদৃশ্য কাউকে বলতে ইচ্ছে হলো, “এই, আমাকে একটু চিমটি কাট তো!”-ইন্টারভিউ দিতে সকাল সকালই ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে কর্ণভের। তৈরি হয়ে দরজায় তালা ঝুলাতে ঝুলাতেই হঠাৎ সিঁড়ির দিকে নজর গেল তার। জোরোসরো হয়ে হাবিবা দাঁড়িয়ে আছে। কর্ণভ কাছাকাছি এলো। কিছু বলবার আগেই নোটপ্যাড এগিয়ে দিলো সে। কর্ণভ ভ্রু কুঁচকালো। সাদা কাগজে দৃষ্টি ফেললো,—“আপনি আমার সাথে কথা বলছেন না কেন? ছাদেও আসছেন না। আমি কি কিছু করেছি?”কর্ণভ গম্ভীর স্বরে বললো, “ব্যস্ত ছিলাম।”—“মিথ্যে কথা। আপনি ইচ্ছে করে কথা বলছেন না। কেন বলছেন না? আমাকে কি আপনার পছন্দ না?”কর্ণভের পালটা প্রশ্ন, “তুমি আমাকে পছন্দ করো?”হাবিবা সময় নিলো না। জোরে জোরে মাথা নাড়ালো। সে পছন্দ করে। ভীষণ পছন্দ করে। কর্ণভ দাম্ভিক ভাবে তখনো তাকিয়ে। আবার প্রশ্ন করলো,—“কেন পছন্দ করো? আমি তোমাদের মতো বড়লোক নই।”হাবিবা নোটপ্যাডে দাগ কাটলো, “আমার বড়লোকদের পছন্দ না।”—“আমি কিন্তু তোমার সব সখ পুরণ করতে পারবো না।”—“করতে হবে না।”কর্ণভ থামলো। গাঢ় কণ্ঠে বললো, —“নিস্তব্ধতা, আমি কিন্তু বেকার।”হাবিবা লিখলো, “সমস্যা নেই।”—“চাকরি পাওয়া অব্দি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে? বছরও লাগতে পারে।”—“পারবো।”_____________সমাপ্ত~