দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১৩
এরই মাঝে তুর্কিরা যখন ইউরোপের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বুলগেরিয়া,
মেসোডোনিয়া, সাবীয়া এবং শীঘ্রই হাঙ্গেরিতেও পৌছে যায়, অটোমান বাহিনী,
ল্যাটিন গির্জার শক্তিশালী একটি অংশ পোপ আরবানের নেতৃত্বে ও আনুকৃল্যে
খ্রিস্টান শক্তিরা নিজেদের মধ্যে একতা এনে গ্রিকদের সাথে নিয়ে খরিস্টান শক্তি
রক্ষায় একত্রিত হয়ে বিভিন্ন আক্রমণের উদ্যোগ নেয়।
১৩৬৩ সালে সাবীয়া এবং প্রথমবারের মতো হাঙ্গেরিয়ান সেনাবাহিনী গ্রিকদের সাহায্য ব্যতীত
আদ্রিয়ানোপলের দিকে অগ্রসর হয় মারিতজা নদী পার হয়ে। কিন্তু তার পর
পরই তুর্কিরা হঠাৎ আক্রমণ করে এদের ওপর। যখন সাবীয়ান ও
হাঙ্গেরিয়ানরা কোনো বাধা না পাওয়ায় রাতের অন্ধকারের উৎসব শেষে ঘুমিয়ে
পড়ে, তুর্কিরা বন্য পশুর মতোই এদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুনরায় বাতাসের
আগে ধোঁয়া ছোটার মতো করে সাববীয়ান ও হাঙ্গেরিয়ানরা নদী পার হয়ে ফিরে
যেতে চাইলেও তুর্কিরা সকলকে নিশ্চিন্ত করে দেয় ।
এ ধরনের আরো একটি ক্রুসেডের উদ্যোগও ভেস্তে যায় ল্যাটিন এবং
গ্রিক গির্জার মাঝে বিবাদের কারণে । এ সম্পর্কে পেত্রক পোপ আরবানকে এক
পত্রে জানান, “ওসমানীয়রা শক্র। কিন্তু গির্জা নিয়ে বিভক্ত গ্রিকরা শত্রুর
চেয়েও খারাপ ।” এক্ষেত্রে জন পালাইয়োলগের কাছে বন্ধু জোগাড় করার
একটাই পথ ছিল, তা হলো রোমান গির্জার কাছে গ্রিকদেরকে সমর্পণ করা।
আর ঠিক এই কাজটিই তিনি করেন হাঙ্গেরিতে গোপন একটি ভ্রমণের
মাধ্যমে । কিন্তু নিজ দেশে ফেরার সময় পথিমধ্যে বুলগেরিয়ানদের হাতে দুর্গে
বন্দি হন। এটি স্যাভয়ের আমাডেও-কে আক্রমণ পরিচালনা করতে উক্ষে
দেয়, যিনি ১৩৬৬ সালে আরেকটি পোপতান্ত্রিক ক্রুসেডে প্রবৃত্ত হন। তিনি
তুর্কিদের কাছ থেকে গালিপন্লী দখল করে নেন। কিন্তু এখানে থেকে তুর্কিদের
সাথে যুদ্ধ করার বদলে কৃষ্ণ সাগর পার হয়ে বুলগেরিয়ার খ্রিস্টানদের সাথে
যুদ্ধ করতে রওনা হন। সম্রাটকে শক্তি দিয়ে যেমনটা হাঙ্গেরিয়ানরা করেছিল,
রোমান গির্জায় সমর্পিত হতে বলেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে আমাডেও ফিরে যান
এবং গ্রিকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন।
সমতরট আত্মসমর্পণ করেন এবং ১৩৬৯ সালে রোমে যাত্রা করেন। এখানে
তিনি শপথ করে গৌড়া গির্জাকে পরিত্যাগ করেন এর বিনিময়ে তুর্কিদের
বিরুদ্ধে খ্রিস্টান রাজকুমারদের সাহায্য পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পান। কিন্তু কোনো
সাহায্যও তো আসেইনি বরঞ্চ দেশে ফেরার পথে ভেনিসে খণের দায়ে বন্দি
করা হয় তাকে । যখন তার বড় ছেলে আন্দ্রোনিকাস মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার
করে, ছোট ছেলে ম্যানুয়েলও একই কাজ করে। কিন্তু রোমের কাছে তার
আত্মসমর্পণকে কনস্টান্টিনোপলে কোনো সমর্থন দেয়া হয়নি। ফলে মুরাদের
প্রজা হিসেবে আত্মসমর্পণের পরই তিনি মুক্তি পান।
ল্যাটিন গির্জার বিরুদ্ধে বলকান খ্রিস্টানদের এই ঘৃণার মনোভাব থেকে
অটোমানরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এই কারণে ক্যাথলিক গির্জার
বিপরীতে গোৌঁড়াবাদকেই তারা সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়। এর অর্থ দাড়ায়
এই যে গ্রিক অথবা স্ত্রাভ, সার্ব অথবা বুলগেরিয়ান যেই হোক না কেন
প্রতিবেশীর চেয়ে অটোমান শাসনকেই পছন্দ করে বেশি আর সবার ওপরে
হাঙ্গেরিয়ানরা যাতে তাদেরকে শাসন করতে না পারে, সে দিকেই লক্ষ রাখা
হয়। এ জাতীয় মনোভাবের কারণেই মুরাদকে রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হতে
পথটুকুকে সহজ করে দেয়।
এর পূর্বে অটোমানদের জয় করা অঞ্চলের সংখ্যা
ছিল সামান্য । কিন্ত ইউরোপে এসে এশিয়ার ক্ষেত্রে কয়েক গুণ বেশি জনসংখ্যা
গয় করে নেয় তারা । অন্যদিকে এদের মাঝে জাতিগত, ধর্মণত, ভাষাগত
এবং রাজনৈতিক চরিত্রের দিক দিয়েও বৈচিত্র্য ছিল অনেক বেশি । কিভাবে
এদেরকে সংমিশ্রণ করা যায়?_ এটাই ছিল মুরাদের সমস্যা । এর সমাধান করতে
গয়েই তিনি একটি কার্যকর ও সফল রাষ্ট্র পরিচালনার চর্চা করতে থাকেন।
বলকানের খ্রিস্টান জনগণ ইসলাম সম্পর্কে বলতে গেলে প্রায় কিছুই জানত না।
এ|হ এশিয়ার খ্রিস্টানদের মতো সহজেই ধর্মান্তরিত হতে রাজি হয়নি তারা। একই
»ণে মুরাদ এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যয় করছিলেন। বাড়তি সামরিক সম্পদ ও ছিল না।
এ মাধ্যমে পুলিশি নিয়ন্ত্রণের আরো অন্য ব্যবস্থা করতে পারেন খ্রিস্টান ধর্ম
ংপর্ণভাবে বিলোপ না করে।
ফলে জোরপূবক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হলে
14,0নদের মাঝে অটোমানদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায়।
এ ধারণে বলকানের প্রজারাষ্ট্রসমূহে দেশীয় ধিস্টানদের মেনে নেয়ার নীতি গ্রহণ
বন মুরাদ । অটোমান সেনাবাহিনীতে সামরিক লোকদের জায়গা দিয়ে হাজার
£]এ আঞ্চলিক খিস্টান সৈন্যদেরকে নিয়োগ দেন তাদের নিজেদেরই রাজকুমার বা
এমদারের অধীনে। মুক্তি দেয়া হয় এবং বন্টিত রাষ্ট্রীয় জমির সম্পত্তি ভোগ করার
‘আণণশর দেয়া হয়।
কিন্ত একত্রীকরণের সমস্যা দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রধানত কাজ করেছিল
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাসতৃপ্রথার নীতি । যেমনটা অটোমান তুর্কিরা তাদের ইতিহাসের
শুরুর দিকে নিজেরাও অভিজ্ঞতা করেছিল। এই দাসত্প্রথা আরোপ করা
হয়েছিল যুদ্ধবন্দি ও দখলীকৃত অঞ্চলসমূহের_ জনগণের ওপর। একটি
আইনের মাধ্যমের অটোমান সৈন্যকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, যার
মাধ্যমে সে তার বন্দিকে অধিকারে রাখতে পারবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বন্দিটি
স্বেচ্ছায় ইসলামচর্চায় রাজি হয়। এক্ষেত্রে বন্দি লোকটিকে গৃহকাজ বা
কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারত অথবা খোলা বাজারে বিক্রিও করে দিতে
পারত।
এটি নির্ভর করত মোট বন্দিদের ওপর বাজারমূল্যের পঞ্চমাংশের
ওপর সরকারের অধিকারনুযায়ী। গ্রিকদের পক্ষে এই অবমাননা সহ্য করা সম্ভব
ছিল না। বাইজেন্টাইন সম্রাটরা দাসতৃপ্রথার বিলুপ্তির ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে
গিয়েছিল । তুর্কি শক্তি এভাবে নির্দিষ্ট একটি হারে খ্রিস্টানদেরকে ইসলামে
ধর্মান্তরিত করতে পেরেছিল, যারা স্বাধীনতার বিনিময়ে ধর্ম পরিবর্তন করতেই
বেশি আগ্রহী ছিল।
কিন্তু প্রক্রিয়াটি ছিল স্থিতিস্থাপক। অনেক গ্রিক-ই সুযোগ পেয়েছিল ধর্মান্তরিত
না হয়েও মুক্তি পাবার। এটি ঘটত সেসব শহরের ক্ষেত্রে যেখানে দাঙ্গা ছিল,
কখনো কখনো শর্তসাপেক্ষ দখলীকরণে, আর বেশির ভাগ সময়ে মুরাদের
সেনাবাহিনী দাসদের কাছ থেকে মুক্তিপণ পেয়ে তাকে মুক্তি দেয়াটাকেই
অধিক পছন্দ করত গ্রাম্য জেলাগুলোতে দাসত্প্রথার ভয় ছিল কম। পর্বতে
কম।
এ সমস্ত জমি তাদের জয় করে নেয়া বিজয়ী মালিকের অধিকারে চলে
যেত। শত্রর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া জমিতে একটি নির্দিষ্ট করের বিনিময়ে
অটোমান জমি মালিকদের প্রয়োজন ছিল তাদের জমি চাষবাসের লোক । আর
এদের অনেকেই ধর্মীভ্তরিত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যায়।
অন্যদিকে নারীরা, যুদ্ধ বিধবা বা গ্রিক, সার্ব অথবা বুলগেরিয়াবাসীদের
তরুণী কন্যা যাই হোক না কেন বিজয়ীদের স্ত্রী বা উপপত্বীতে পরিণত হয়।