দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১১
তবে এসব কিছুই অর্থানকে স্তব্ধ করতে পারেনি বাইজেন্টাইনের অন্য
আরেক শক্রর সাথে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়তে । স্টিফেন দুশান, যিনি নিজের
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র সার্বিয়াকে সাম্রাজ্যে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। এমনকি
ভেনেশীয়ানরা যাকে কনস্টান্টিনোপলের সম্রাট হিসেবে ডাকত ।
তিনি নিজেই নিজেকে “সব রোমান সাম্রাজ্যের প্রভু” হিসেবে পরিচয় দিতে গছন্দ করতেন।
কিন্তু তারপরেও কনস্টান্টিনোপল আক্রমণের ক্ষেত্রে ভেনেশীয়ানের সহায়তা না
পেয়ে অর্থানের সাহায্য কামনা করেন। এর বিনিময়ে নিজের কন্যার সাথে
অর্থানের পুত্রের বিবাহ দিতে প্রস্তাব করেন। এর মাধ্যমে সার্বিয়ান এবং
অটোমানদের যৌথ আক্রমণের মাধ্যমে কনস্টান্টিনোপল দখল করতে চাইলেও
এ ঘটনা কাটাকুজিন টের পেয়ে যায়। অর্থানের সম্মতি নিয়ে যাওয়া দূতেরা
তার হাতে ধরা পড়ে যায়। কাটাকুজিন এদেরকে মেরে ফেলে এবং বন্দি
করে। কিন্তু স্টিফেন অথবা অর্খান কেউই কোনো সমঝোতায় বসেনি
ফলস্বরূপ স্টিফেন ১৩৫৫ সালে নিজেই কনস্টান্টিনোপলের ওপর আঘাত
হানার চেষ্টা করেন আশি হাজার মানুষের এক বাহিনী নিয়ে।
কিন্তু যাত্রার দ্বিতীয় দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং একই পরিণতি হয় তীর সাবীয়ান
সাম্াজ্যেরও। ইতিমধ্যে ১৩৫০ সালে, কাটাকুজিনে আরো বিশ হাজার
অটোমান অশ্বারোহী সেনাদেরকে ডেকে পাঠায় নিজের সাহায্যর্থে।
সেলোনিকাকে ইশনের হাত থেকে বাচানোর জন্য মেসিডোনিয়ার উপকূল
থেকে নিজের সৈন্মদেরকে সেলোনিকার চারপাশে জড়ো করে । সেলোনিকা
নিরাপদ হয়; যদিও তুর্কি যোদ্ধারা এ দুই শহরের কোনোটিই অধিগ্রহণ
করেনি। সুলতানের নির্দেশানুযায়ী এশিয়া মাইনরে ফিরে আসে । দুই বছর
পরে অর্খান, জেনোয়িসকে তার এতিহাসিক বাণিজ্যিক প্রতিদ্ন্দী ভেনেশীয়ার
বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে সহায়তা দেন।
১৩৫২ সালে যখন ভেনেশীয়া বুলগেরিয়াকে
সাথে নিয়ে জন পালাইয়োলগের বিরুদ্ধে খোলাখুলি যুদ্ধ ঘোষণা করে তখন
কাটাকুজিন আবারো বিশ হাজার অটোমান সৈন্য ডেকে পাঠায় । এ ব্যয়ভার
মেটাতে কনস্টান্টিনোপলের গির্জাসমূহ লুটপাট করে। এছাড়াও থ্রেসিয়াতে
অর্থানকে একটি দুর্গ পুরস্কার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। এর মাধ্যমে কাটাকুজিন
আড্রিয়ানোপলকে সুরক্ষিত করে। থ্রেস এবং বেশির ভাগ মেসিভোনিয়াতে
ঘোষণা করে।
১৩৫৩ সালে অর্থন পুত্র সুলেমান পাশা অটোমান বাহিনী নিয়ে
হেলেনপন্ট অতিক্রম করেন দুর্গ অধিকারের জন্য, যা কাটাকুজিন প্রতিজ্ঞা
করেছিল। এর অবস্থান ছিল গালিপল্লী এবং আজিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী
উপদ্বীপে। পৌছানোর পরপরই ভূমিকম্পের ফলে গালিপন্লীর দেয়ালের কিছু
অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। সুলেমান তড়িঘড়ি এ দুর্গও দখল করে নেন। শীপ্রই এ
দেয়াল মেরামত করে সুলেমান এশিয়া থেকে আগত প্রথম অটোমান বসতি
স্থাপন করেন এখানে ।
পরবর্তীতে খুব দ্রুত সফলতার সাথে আরো বসতি
স্বাপন করা হয়। এর ফলে খরিস্টান নেতারা নিজেদের জমিতে মুসলিমদের
অধিকারে চলে যায়। এ মুসলিমরা ছিল অর্ধানের যুদ্ধের সাথি। এদের ওপর
একত্রিত শক্তি এবং সহযোদ্ধা হিসেবে অর্থান ভরসা করতেন। এদের বিশাল
সৈন্যবাহিনী ইউরোপে অটোমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাকে সহায়তা করে। এরই
মাঝে চাষী ব্যতীত আর সমস্ত স্থানীয় থিকেরা তাদের প্রদেশসমূহের দুর্গ এবং
শহরে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। যেখানে স্বেচ্ছাশ্রম ব্যতীত তাদের ওপর
উৎপীড়ন ঠেকানোর আর কোনো উপায় ছিল না।
এভাবেই দখল কার্য শুরু হয়ে তা ক্রমেই তরান্বিত হয়। এর ফলে
ইউরোপে গাজীদের সমাজ বৃদ্ধি লাভ করে। আর বাইজেন্টাইন ভূমিতে
অটোমান নিয়ম-নীতি আরোপ করা শুরু হয়। খুব দ্রস্ত চলার মাধ্যমে দূরতৃ
অতিক্রম করে, রাস্তা বন্ধ করে, শস্য ধ্বংস করে অর্থনেতিক বাধা তৈরি করে
প্রধান সেনাবাহিনী হাইওয়ের উভয় পার্ে আনাতোলিয়ার তুর্কিদের বসতি
স্থাপন করে এবং এভাবে চারটি নদী উপত্যকা দখল করে নেয়,
যা দানিয়ুয়ের দিকে গেছে। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি যেখানে স্থানীয়রা
শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল। এ ধরনের বলকান সমাজে আক্রমণকারীদের
তেমন বাধা দেয়া হতো না। ফলে তাদেরকে কিছু বলা হতো না। দরবেশ
ভাতৃসংঘ এভাবে নতুন নতুন তুর্কি স্থাপিত গ্রামে আশ্রয় নিতে শুরু করে।
মুসলমানদের যেসব জমি তারা দখল করেছিল সেখানকার কৃষকদের সাথে
নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
এই কৃষকদের সংখ্যা যে কোনো সামাজিক
বিপ্লবের জন্য যথেষ্ট ছিল। এসব মুসলমান প্রভু পুরাতন জমিদারি প্রথা বিলোপ
করে দেয়, সেটা গ্রিক বা ল্যাটিন যাই ছিল না কেন। এর পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত
হয় টিলেঢালা এবং পরোক্ষ এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পূর্বের অবৈতনিক
শ্রমের প্রথা বিলুপ্ত করে কৃষকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট করের ব্যবস্থা করা হয়।
অটোমান সংকেত অনুযায়ী এ মুসলমান মালিকেরা জমিদার ছিল না, বরঞ্চ
কৃষক এবং সুলতানদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচিত হতো । সুলতান
ছিলেন সকল জমির মালিক ।
এভাবে বাইজেন্টাইন আমলের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অনৈক্য দূর
করে অটোমানরা সবকিছুর ওপর রাষ্ট্রের অধিকারকে শক্ত করে । ‘এভাবে
অটোমান ভূখপ্ডের মাঝে খ্রিস্টান জমিদার বা প্রভুরা সুলতানের সার্বভৌমত্ে
নিজেদেরকে প্রজা হিসেবে মেনে নিয়ে তাকে বাৎসরিক একটি কর প্রদানে
সম্মত হয়, এটিকে বিবেচনা করা হতো একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রদান করা
আনুগত্য হিসেবে। প্রথম থেকে অটোমান রাষ্ট্র খিস্টানদের সাথে শান্তিপূর্ণ
সম্পর্ক গড়ে তোলে, যেন তারা কৃষকদেরকে কোনো রকম বিপ্লবে উদ্দুদ্ধ না
করতে পারে। ফলস্বরূপ বলকান অঞ্চলের কৃষকেরা অটোমান ক্ষমতাকে