দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ১১
অর্থান এখন সম্রাটের প্রভূ হিসেবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ১৩৫৯
সালে পঞ্চম জন স্কুটারিতে সুলতানের কাছে গিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
সুলতান সম্রাটের কাছে একটি চুক্তি পেশ করেন। সেখানে সম্রাট সুলতানের
ছেলের মুক্তিপণের অর্ধেক দিতে রাজি হয় এবং থেসে অটোমানদের সাম্যবস্থা
মেনে নেন। হালিলকে উদ্ধার করার পর জন নিজের দশ বছর বয়সী কন্যার
সাথে তার বিয়ে দেন। সম্রাট ফোকাইয়ায় ফিরে এসে অর্থানের দাবিনুযারী
বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ দেন এবং হালিলকে নিকাইয়াতে নিয়ে আসেন।
উৎসবের মাধ্যমে ।
জন কাটাকুজিন ইউরোপে অটোমানদেরকে সৈন্য হিসেবে
পরিচিত দিয়েছিল আর এভাবেই তার প্রতিদ্বন্দী জন পালাইয়োলগ তাদের
পরবর্তী উপস্থিতিকে অভিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দান করেন।
১৩৫৯ সালে অর্থান মৃত্যুবরণ করেন। এর আগের বছরই তার বড় সন্তান
সুলেমান গালিপন্লী দ্বীপপুঞ্জে শিকার করার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে
মৃত্যুবরণ করেন। অর্খানের ছোট পুত্র সফল হয়েছিলেন, যার নাম ছিল মুরাদ
আই অর্খান, তিনজন অটোমান প্রতিষ্ঠাতার মাঝে দ্বিতীয় জন ছিলেন এই
মুরাদ, যোদ্ধার চেয়ে কূটনৈতিক হিসেবেই সাফল্য অর্জন করেছিলেন বেশি।
নিজের রাষ্ট্রকে তিনি একত্রিত জাতিতে পরিণত করেন।
একটি আধুনিক সেনাবাহিনী নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন। কিন্তু তিনি তার সরাসরি শক্তি
ব্যবহার করেননি, কিন্তু একে উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য পরোক্ষ উপায়ে ব্যবহার
করেন। দুর্বল এবং বিভক্ত শত্রুর মোকাবেলা করেন। এক্ষেত্রে গতিবেণের
দ্রুততার চেয়েও তিনি ব্যবহার করেছেন ধের্যশক্তির এবং সুচতুরতার সাথে
ঘটনাসমূহকে নিজের পক্ষে আনার ক্ষমতাকে । এভাবেই অটোমান সাম্রাজ্যের
ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপে ।
এখন সময় হয়েছে সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়ানোর; আরো বিভিন্ন অঞ্চল জয়
করার মাধ্যমে এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বাকি অংশ অধিকার এবং এর
সীমান্তবর্তী সকল বলকান খ্রিস্টান রাজ্যসমূহকে অধিকার করার জন্য অটোমান
সেনাবাহিনীকে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত করার।
এই ছিল চল্লিশ বছর বয়সী
নিয়ে জন্মেছেন। একজন সামরিক নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি
ছিলেন নিজের সময়ের সেরা । এক্ষেত্রে মুরাদ ধন্যবাদের দাবিদার । কেননা
তার মাধ্যমেই পশ্চিম পূর্বের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়! যেমনটা
করেছিল পূর্ব পশ্চিমের কাছে গ্রিক এবং রোমান শতকসমূহের সময়ে ।
অর্থান ছিলেন ইউরোপে অটোমান সাম্রাজ্যের অগ্রদূত। মুরাদ ছিল এর প্রথম
শ্রেষ্ঠ সুলতান। চর্তুদশ শতাব্দীর বাকি অংশজুড়ে তিনি পুরো একটি প্রজন্
শাসন করেছিলেন। একজন যুদ্ধবাজ হয়েও তিনি নিজের সামরিক আগ্রহকে
এক পাশে সরিয়ে রেখে নেতৃত্বের গুণাবলির মাধ্যমে অটোমান অঞ্চলকে
বলকান ছ্ীপপুঞ্জের শেষ সীমা পর্যন্ত বর্ধিত করেন। আর এই বিজয়ে স্থায়ী
হয়েছিল এর পরবর্তী পাঁচটি বছর।
একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং রাজনৈতিকভাবে
বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছেন বিশাল এবং
রাষ্ট্রনায়কোচিত সরকারব্যবস্থার কাঠামো । এভাবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের
ভেঙে যাওয়া টুকরাগুলোকে একত্রিত করে শৃন্যস্থানটি এমন ভাবে পূরণ করেন,
যা ইতিহাসের এ সময়কার অন্য কোনো শক্তি পারেনি । এক নতুন অটোমান
সভ্যতার অগ্রযাত্রার ঘোষণা করেছিলেন, জাতি, ধর্ম ও ভাষার বৈচিত্র্য নিয়েও
যা হয়ে উঠেছিল অনন্য, অতুলনীয় ।
মোটের ওপর কাকতালীয়ভাবে পূর্ব ইউরোপে এমন সময় অটোমান
সাম্রাজ্যের বুৎপত্তি ঘটে যখন পশ্চিমে বর্জনের একটি যুগ চলছিল। মধ্য
ত্রয়োদশ শতকে জেরুজালেমের পতন এবং এশিয়া মাইনরে মঙ্গোলদের
পারেনি ।
ক্রুসেডের শক্তি এর নিজের ওপরই আঘাত হানে, ল্যাটিন খিস্টানরা
নিজেদের মাঝেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইটালির ব্যাংকসমূহ যারা পূর্বের সাথে
লাভজনক ব্যবসায় জড়িয়ে ক্রুসেডকে অর্থ সাহায্য করত এগুলোও একের পর
এক ভেঙে পড়ে । আর্থিক ও অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে সাধারণভাবেই
সামাজিক সংকট দেখা দেয়। অস্থিতিশীল ও অনুদ্দীপ্ত ইউরোপীয় সমাজ
বিরুদ্ধে শ্রমিক বিদ্রোহ হয়ে ওঠে প্রবল।
পূর্ব থেকে গ্লেগ “কালো মৃত্যুর” কারণে ভূমধ্যসাগর এবং পশ্চিম ইউরোপের
জনগণ নিশ্চিহ হতে থাকে । আর তাই নতুন পৃথিবীর আবিষ্কার তার শক্তি সংগ্রহের জন্য
আটলান্টিক পার হয়ে যায়। মধ্যযুগীয় আবহাওয়ার ক্ষেত্রে এ সময়টা তাই হয়ে ওঠে
গুরুতৃপূর্ণ যখন অটোমান তুর্কিদের কাছ থেকেই এর উষার আলো দেখতে পায়।
১৩৬০ সালে ইউরোপে মুরাদের আত্মরক্ষাকাল শুরু হয় তার রাজ্যভিষেকের
পূর্বেই । সুদক্ষ জেনারেলদের মাধ্যমে এর প্রথম পর্যায়ে খুব দ্রুত পূর্ণ হয়।
মাত্র পনেরো মাসের মধ্যেই অটোমানরা কার্ষকরিভাবে থেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে
নেয়।
এর চাবিকাঠি ছিল দুর্গসমূহ আর বলকান পর্বতের পাদদেশে পর্যন্ত বিস্তৃত
উর্বর সমভূমি। চোরলুল দুর্গতে পাইকারি হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বলকানের সমগ্র
অঞ্চলে তুর্কিভীতি ছড়িয়ে পড়ে। বার্সার পরিবর্তে শীঘ্বই আদ্রিয়ানোপল
অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। এরপর অটোমানরা কনস্টান্টিনোপলকে
পাশ কাটিয়ে পশ্চিমে যাত্রা করে। জন পালাইয়োলগ পরিণত হন একজন
পুতুল স্ম্রাটে। এমন একটি চুক্তিতে সই করতে বাধ্য হন যার কারণে
ভবিষ্যতে থ্েসের দাবি উত্থাপনের কোনো চেষ্টা করার সুযোগ হারান।
অথবা সার্বিয়া বা বুলগেরিয়া থেকেও কোনো সহায়তা নিতে পারবেন না অটোমান
অগ্রযাত্রাকে দমন করার। মোটের ওপর অটোমানদেরকে সাহায্য করার
প্রতিশ্রুতি দেয় এ চুক্তি যাতে তারা এশিয়া মাইনরে নিজেদের তুর্কি শত্রুর
মোকাবেলা করতে পারে । এর দশ বছর পরেই তিনি মুরাদের প্রজায় পরিণত
হন। মুরাদকে নিজের অধিরাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অটোমান সেনাবাহিনীতে
যোগদান করেন।