দ্যা আটোম্যান সেঞ্চুরিস পর্ব ৯
গাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে খ্রিস্টান শক্তিসমূহের এক্যের অভাব- পূর্বের বিরুদ্ধে
পশ্চিম, গৌড়া খিস্টানদের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক থিস্টান, ঘরিকদের বিরুদ্ধে
রোমান। ত্রয়োদশ শতকের প্রথম ভাগে এটি শুরু হয়েছিল চতুর্থ ক্রুসেডের
শঠাটিন নাইটদের বিশ্বাসঘাতক হয়ে আক্রমণের মাধ্যমে ।
প্রথমে এটি পবিত্র
ভূমির মুসলিমের বিরুদ্ধে ছিল না। এই আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল
কনস্টান্টিনোপলের গ্রিক খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে শহর দখল
এবং ধ্বংস করার মাধ্যমে ইউরোপে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বেশির ভাগ
অঞ্চলেই ল্যাটিন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ।
এক্ষেত্রে খ্রিস্টানদের মাঝে অনৈক্যের উপাদান বিশেষভাবে ধন্যবাদের যোগ্য। কেননা এ ল্যাটিন সাম্রাজ্য খুবই
ক্ষণস্থায়ী হয়েছিল, মাত্র অর্ধশতান্দী ছিল এর আয়ু। এ সময় নিকাইয়া থেকে
গ্রিকেরা এশিয়াতে তাদের অন্যান্য ল্যাটিন আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া অঞ্চল
শাসন করত । ১২৬১ সালে তারা পুনরায় কনস্টান্টিনোপল দখল করে নেয়।
কিন্তু তাদের সাম্রাজ্যের ভাগ্য পুনরায় দুর্যোগের মুখে পড়ে ।
পরবর্তী দুই শতক ধরে যদি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য টিকে ছিল, কিন্ত এর ভাবমূর্তি ছিল
পূর্বের সাম্রাজ্যের তুলনায় কোনোরূপ অবয়বহীন ভূতের মতো। সভ্যতা ও
শক্তি নিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে এর পূর্বেও গৌরব পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে
যায়। পূর্বের নিরাপত্তা ও শক্তি কোনোটাই আর পুনরুদ্ধার করা যায়নি।
সাম্রাজ্যের ভূ-খণ্ড আস্তে আস্তে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যায়। বুলগেরিয়া, সাবীয়া,
মেসিডোনিয়া শক্রর হাতি চলে যায়। কনস্টান্টিনোপল অর্ধেক ভাবেই ধ্বংস
হয়ে যায়, সম্পদসমূহ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে আর অধিকাংশ অধিবাসী
অন্যত্র চলে যায়। পূর্বের সাথে এর বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে পড়ে।
পশ্চিমে এর যতটুকু বাকি ছিল তা-ও ভেনেশিয়া ও জেনোইসের হাতে চলে যায়। পোপতন্ত্
ও ল্যাটিন শক্তির মধ্যে ধর্মীয় ছন্দ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম
আকার ধারণ করে। এতে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে অন্তর্গত
প্রশাসনিক অনৈক্য, সামাজিক ক্ষয় এবং অর্থনৈতিক দেউলিয়া অবস্থা ।
বাইজেন্টাইন ইতিহাসের এ রকম সংকটপূর্ণ অবস্থাতে এসেও কোনো
রাজবংশীয় সম্রাটই চেষ্টা করেননি বেঁচে থাকা উপাদানসমূহ নিয়ে একে নতুন
জীবন দান করার। উপরন্তু পালাইয়োলগ সম্রাটদের প্রথম শাসনামলে
কনস্টান্টিনোপল পুনরায় অধিকার করার পর অনুসরণ করা হয় পৃথিবীর
কলাচর্চার ক্ষেত্র যদিও কোনো রেনেসার জন্য নয়, বরঞ্চ সাম্রাজোের
ক্ষয়প্রাপ্তিতার জন্যই এমনটা হয়েছিল। খ্রিস্টানের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানের এ
অপবিত্র যুদ্ধের কারণ ছিল সাম্রাজ্যের রাজবংশের অন্তর্গত অনৈক্য। এ
রাজবংশ ব্যাপৃত ছিল গৃহযুদ্ধে। পুত্র যুদ্ধ করে পিতার বিরুদ্ধে, পৌত্র যুদ্ধ করে
পিতামহের বিরুদ্ধে, বৈধ সার্বভৌমত্রে বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দখলকারী। এই
এক্যের অভাব পরিস্থিতি তুর্কিদের অনুকূলে কাজ করে। যেহেতু তারা
ইসলামের জন্য পবিত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে একজোট ছিল। এই অবস্থায় বলা যায়
তারা ইউরোপে আক্রমণ করেনি বরঞ্চ তাদেরকে আক্রমণ করার জন্য আমন্ত্রণ
জানানো হয়েছিল ।
প্রথম দিকে এখানে তারা তাদের ভাড়াটে সৈনিকের ভূমিকা পালন করে।
শতাব্দী পূর্বে প্রথমে তুর্কমানরা দোবরুজা, পশ্চিম কৃষ্ণ সাগরীয় উপকূলে
বসতি স্থাপন করে। প্রথম পালাইয়োলগের সম্রাট হিসেবে অষ্টম মাইকেল
রাজ্যাভিষেক নেওয়ার পর ল্যাটিন অধিকৃত থেকে শরণার্থী হিসেবে সেলজুক
কোর্টে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
তুর্কমানরা একজন রাজ্য হারানো সেলজুক
সুলতান ইজ-এদ-দিনকে সহায়তা করে, যিনি কনস্টান্টিনোপলে শরণার্থী
হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি দুর্ধর্ষ আন্দোলন
পরিচালনা করার পর তারা সম্রাটের হাত থেকে সুলতানকে রক্ষা করে। এবং
ক্রিমিয়াতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তার পুত্র এবং পাহারাদারদের একজন
কনস্টান্টিনোপল থেকে এবং খ্রিস্টান হয়ে যায় আর একটি তুর্কি মিলিশিয়া
বাহিনী গঠন করে, যারা খুব দ্রুত সংখ্যায় বেড়ে যায়।
চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় আন্দ্রেনিকাস
করার আমন্ত্রণ জানান। এর সেনাপ্রধান ছিল ভাগ্যান্বেধী সৈন্য রজার দে
ফ্লোর। যখন ক্যাটালান সৈন্য কনস্টান্টিনোপলে সমস্যা তৈরি করে, সে
তাদেরকে সরিয়ে এশিয়া মাইনরে নিয়ে আসে ।
এখানে তারা তুর্কিদের সাথে সফলভাবে যুদ্ধ করে থ্রিকদের ভাগ্যের বিনিময়ে । পরবর্তীতে গ্রিকদের সাথেও
বানিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পায়তারা করে। তারপর যখন রজার দে ফ্লোর সম্রাটের
প্রাসাদে খুন হয়, তখন ক্যাটালান সৈন্যরা গ্রিকদের ওপর চড়াও হয় আর
তাদের সাহায্য করার জন্য পূর্বশক্র তুর্কিদেরকে ডেকে আনে। যে সম্রাটকে
প্রতিরক্ষা দিতে এসেছিল তার বিরুদ্ধেই এশিয়া মাইনর থেকে তুর্কিদেরকে
ডেকে আনে ক্যাটালানরা ।